জনতার গণধোলাই খেয়ে পালিয়েছেন শুভেন্দু-ময়ূখ! | ব্যঙ্গাত্মক রাজনৈতিক গল্প ২০২৫

লেখক : মাসুম

ব্লগ : EditorPosts


অধ্যায় ১: শুভেন্দু ও ময়ূখের জন্মলগ্ন – রাজনীতির দুই পাতার শুরু

উলুবেড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর দিকের এক গ্রাম—মাঠপাড়া। চারপাশে ধানক্ষেত, মাঝখানে একটা ছোট বাজার, আর তার পেছনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানেই জন্ম নেয় দুই কুখ্যাত রাজনৈতিক চরিত্র—শুভেন্দু হালদার আর ময়ূখ পাল

শুভেন্দু ছিল অঙ্কে দুর্দান্ত, কিন্তু নীতিতে দুর্বল। আর ময়ূখ? সে ছিল সাহিত্যের প্রেমিক, কিন্তু মুখে ছিল সাপ।
স্কুলের মাঠে যখন অন্যরা ফুটবল খেলত, তখন শুভেন্দু গাছের ছায়ায় বসে ছেলেদের ভাগ বাঁটোয়ারা করত—“তুই ফরোয়ার্ড, তুই ব্যাক—তোর খেলার দরকার নেই, তুই জল নিয়ে আয়।”

তখন থেকেই রাজনীতি রক্তে ঢুকে পড়ে।
ময়ূখ পেছনে বসে ‘রবীন্দ্র রচনা সমগ্র’ মুখস্থ করত, আর সামনের ছেলেদের দিয়ে গলা ফাটিয়ে স্লোগান তুলত—
“স্কুলে মিড ডে মিলে ডিম চাই!”
“গরম ভাত, নইলে জ্বালিয়ে দে পাট!”

এইভাবে তারা হয়ে উঠল গ্রামের জনপ্রিয় মুখ।


অধ্যায় ২: পঞ্চায়েত থেকে প্রোমোটার– দুর্নীতির সূচনা

শুভেন্দু প্রথম ইউনিয়ন নির্বাচনে দাঁড়ায় ২৩ বছর বয়সে। প্রতিশ্রুতি দেয়—
“হাজার টাকা মান্থলি ভাতা, পাকা রাস্তা, আর গরিব মেয়ের বিয়ে ফ্রি!”

লোকজন হইহই করে ভোট দেয়। জয়লাভের পর প্রথম কাজ ছিল নিজের জন্য একটা ফিজেট স্পিনার কিনে আনা আর চেয়ারে বসে ঘুরানো। দ্বিতীয় কাজ—গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে ওয়াইফাই বসানো, যাতে পরের বছর প্রোমোশন করা যায়। তবে সবচেয়ে বড় কাজ ছিল ‘বালির ঘাটের টেন্ডার’ নিজের নামে নিয়ে আসা।

ময়ূখ তখন তার সঙ্গী। সে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলত—
“উন্নয়নের নামে যারা উন্নয়ন চায় না, তারা প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নশীল শত্রু!”

লোকজন কিছু বুঝত না, কিন্তু করতালির বন্যা বইত।

পরের বছর ময়ূখ বনে যায় পঞ্চায়েত সদস্য। তার প্রথম প্রকল্প—‘বস্তি উন্নয়ন’। কিন্তু বস্তি উন্নত না হয়ে উলটে জায়গায় তৈরি হয় এক সুপার মার্কেট, নাম—“গরীববন্ধু বাজার”।
প্রশ্ন উঠলে ময়ূখ বলত—
“ওই বাজার তো গরীবদের জন্যই, নামেই প্রমাণ!”

লোকজন অগত্যা চুপ। কিন্তু সন্দেহ জন্মাতে থাকে…


অধ্যায় ৩: গদি পাকা, মুখে মধু, পকেটে কালি

ছ’বছরের মধ্যেই শুভেন্দু ও ময়ূখ পরিণত হয় দুইজন দুর্নীতির দানবে
শুভেন্দুর বাড়িতে লাগানো হয় ৮ ফুট উঁচু গেট, যার ওপর লেখা—“জনসেবাই ধর্ম”।
ময়ূখ গড়ে তোলে “নির্মল ভবন”—যেখানে বাস করে তার তিনটে পোষা কুকুর, নাম—নির্বাচন, উন্নয়ন, প্রচার।

একদিন পঞ্চায়েত অফিসে এক বৃদ্ধ গেল তার বাড়ির জন্য সরকারি সহায়তা নিতে। ময়ূখ কাগজ হাতে নিয়ে বলল—
“আপনার নামের পাশে তো কিছুই নেই!”
—“কী থাকবে?”
—“বুঝুন না কাকু, কিছু ‘বিশেষ চিহ্ন’ না দিলে আপনি পাবেন না!”

বৃদ্ধ মাথা নিচু করে চলে গেল। এর কিছুদিন পর সে মারা গেল। এই মৃত্যুতে কেউ শোক জানায়নি, কিন্তু তার দেয়ালে লিখে গিয়েছিল—
“তুই ভালো থাকিস ময়ূখ, আমি মরে বাঁচলাম।”

লোকজন পড়ল, চুপ থাকল।


অধ্যায় ৪: সোশ্যাল মিডিয়া বিদ্রোহ – ছাগলও চেঁচায়!

যে দিনটায় শুভেন্দুর ছেলে বিদেশে পড়তে গেল, সেদিন গ্রামের এক ছাত্র মেট্রিক পরীক্ষায় ফেল করল, কারণ পরীক্ষার দিন স্কুলে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটেছিল—রান্না হয়নি।

লোকজন ক্ষেপে উঠল।
একজন উঠতি ব্লগার ফেসবুকে লিখল—
“শুভেন্দুর ছেলে গ্যালাক্সিতে, আমাদের ছেলে বালিতে।”

একজন বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা বলল—
“রাস্তায় জ্যাম লাগে ওর গাড়ি আসলে, আর আমাদের ছেলের লাশও পড়ে থাকে ঘাটে।”

#গণধোলাই
#চাটার_রাজনীতি
#শুধুই_ভুল_প্রতিশ্রুতি

এইসব হ্যাশট্যাগ ভাইরাল হতে থাকল।


অধ্যায় ৫: জনসভার দিন – গণধোলাই উৎসব

পঞ্চমবার ক্ষমতায় ফিরতে শুভেন্দু আর ময়ূখ মিলিত জনসভা ডাকে খেজুরবাগানে। প্যান্ডেল, চেয়ারে মোড়া সাদা কাপড়, আর তাতে লেখা—“নতুন সকাল, নতুন আশা।”

শুভেন্দু বলল—
“দশ বছর আগে আমরা কথা দিয়েছিলাম রাস্তা, আজ আছে। আমরা দিয়েছিলাম বিদ্যুৎ, আজ তা চমকায়।”

ময়ূখ মাইকে বলল—
“এই জনতা আমাদের পরিবার!”

ঠিক তখনই এক কৃষক চিৎকার করে উঠল—
“পরিবারের পেটে ভাত না থাকলে, সেই পরিবার ঘৃণা করে!”

তারপর শুরু হলো গণধোলাই
জুতো, চটি, পেঁয়াজ, টমেটো, বাঁশ, খেজুরপাতা—যা যা পাওয়া যায়।

শুভেন্দু বলল—
“আমি আপনার ভাই!”
লোক বলল—
“ভাইকে আগে বলিস, তার জমি বেচে দে!”

ময়ূখ বলল—
“এই মার খেয়ে আমরা শিখব।”
—“শিখতে গেলে স্কুলে যা, এখানে গণশিক্ষা চলে!”


অধ্যায় ৬: পালিয়ে বেড়ানো – হাওড়ার বস্তি থেকে বনগাঁর ধানক্ষেত

গণধোলাইয়ের ভিডিও ভাইরাল হয়। টিভির হেডলাইন:
“দু’নেতার গণপলায়ন”
“অপদস্ত শুভেন্দু-ময়ূখ, মুখ ঢেকে পালালেন”

তারা এখন রাত কাটায় পালিয়ে, ভিন্ন জায়গায়, ছদ্মবেশে।
কখনো একজন চায়ের দোকানে হেল্পার, কখনো আরেকজন গোয়ালঘরে কাজ করছে।

এক রাতে দুইজন মুখোমুখি বসে থাকে এক নদীর ধারে।

শুভেন্দু বলে—
“এই নদীটা মনে হয় জানে, আমরা কীভাবে বেইমান হয়েছি।”

ময়ূখ কাঁদে—
“আমরা মানুষ ভুলে গেছিলাম, শুধু ভেবেছিলাম ভোট!”


অধ্যায় ৭: সময়ের বিচার ও জনতার স্মৃতি

পাঁচ বছর কেটে যায়। নতুন সরকার আসে। কিন্তু জনতা ভুলে না।
গ্রামের দেয়ালে এখনো লেখা—
“শুভেন্দু-ময়ূখের আমলে আমরা ছিলাম কাঁদা, আজ আমরা ধান।”

একদিন এক ছোট ছেলে তার দাদুকে জিজ্ঞেস করে—
“গণধোলাই কী জিনিস দাদু?”

দাদু হেসে বললেন—
“গণধোলাই মানে যখন সাধারণ মানুষ বুঝে যায়, তাকে আর বোকা বানানো যাবে না।”


শেষ কথা:
গল্প ব্যঙ্গ হলেও বাস্তবতার আয়না।
যে রাজনীতি শুধু কথা দেয়, কাজ দেয় না—তার শেষ ফলাফল হয় গণধোলাই। আর এই ধোলাই শুধু শরীরে নয়, ইতিহাসের পাতাতেও দাগ ফেলে যায়।


(এই গল্পটি সম্পূর্ণ মৌলিক ও কল্পনাপ্রসূত। বাস্তব কোনো ব্যক্তি বা ঘটনার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া গেলে তা নিছক কাকতালীয়।)

Comments