ভাঙা পৃথিবী: ভালোবাসা, আত্ম-অনুসন্ধান ও সামাজিক পরিবর্তনের বাংলা গল্প
লেখক : মাসুম
ব্লগ : EditorPost
প্রথম অধ্যায়: খোঁজার শুরু
এমন একটি শহর ছিল, যেখানে কেউ কাউকে চিনত না। মুখাবধি সবাই নিজেদের মধ্যে গুঁজে রাখা দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তবে একদিন, শহরের একটি শান্তিপূর্ণ গ্রামে একটি ছেলে আসে, যার নাম ছিল সোহেল। সোহেল আসার পর গ্রামের বাতাসে যেন এক অদ্ভুত পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। কিছু ছিল যে সত্যিই বদলানোর মতো, কিন্তু কেউ জানত না কী। সোহেল ছিল একমাত্র ছেলেটি যে আশেপাশে কোন মানুষের প্রতি তার সহানুভূতি প্রদর্শন করত।
প্রথম দিনেই সোহেল মাটির রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে এক পুরনো গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল, "আমি কেন এখানে এসেছি?" তার মনের মধ্যে একাধিক প্রশ্ন জমে গিয়েছিল। তবে সে জানত, এ জায়গাটাই তার নতুন শুরু।
দ্বিতীয় অধ্যায়: মানসিক কষ্টের আড়াল
গ্রামের মানুষেরা খুব দ্রুত সোহেলকে মেনে নেয়। তাদের মধ্যে ছিল রাহিম, একজন দরিদ্র কৃষক; মিতা, যে সারা জীবন অন্যদের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে; এবং সাব্বির, এক ধনী ব্যবসায়ী, যাকে তার সাফল্যের কারণে অহংকারে ভুগতে দেখা যায়।
তবে সোহেল যখন তাদের মধ্যে মিলেমিশে থাকতে শুরু করল, তখন সে দেখতে পেল এক অদ্ভুত ধরণের দুঃখ। প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো কষ্টের মধ্যে ডুবে ছিল, যা তাদের অন্তরে একটা নিঃসঙ্গতার জন্ম দিয়েছিল। সবাই জানত না, তবে তারা একে অপরের সঙ্গে শেয়ার না করেই বেঁচে ছিল।
তৃতীয় অধ্যায়: বদলানোর স্বপ্ন
একদিন, সোহেল গ্রামে একটি সভা ডাকে। গ্রামবাসীরা সেই সভায় এসে জানতে পারে, সোহেল তাদের জন্য কী কিছু করতে চায়। সোহেল বলেছিল, "আপনারা সবাই একে অপরের জন্য একটি পরিবার। কেননা, এই পৃথিবী একে অপরের সাহায্য ছাড়া কখনো চলবে না। আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ দূর করতে হবে।" সোহেলের এই কথা সবাইকে বিস্মিত করে। তারা এতদিন জানত না যে, তাদের মধ্যে এমন শক্তি ছিল যা দিয়ে তারা নিজেদের পৃথিবী বদলাতে পারে।
গ্রামের সবাই একযোগে খোলাখুলি তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু করে। রাহিম তার দুঃখজনক জীবন নিয়ে শেয়ার করে, মিতা তার পরিবারকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করে, এবং সাব্বিরও একদিন তার আত্মসমালোচনা শুরু করে। সোহেল তাদের সহায়তা করল, তারা নিজেদের ভেতরের ভয়গুলো কাটিয়ে উঠল।
চতুর্থ অধ্যায়: প্রেমের অবাঞ্ছিত পথ
গ্রামের মধ্যে এক রাত্রে এক বিশেষ পরিবর্তন ঘটে, যখন সোহেল মিতার সঙ্গে গভীরভাবে আলাপ করতে শুরু করে। প্রথমে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল, তবে তারপর প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। সোহেল বুঝতে পারে, সে মিতাকে ভীষণ ভালোবাসে, কিন্তু মিতার মধ্যেও তার একটি স্বপ্ন ছিল—নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমাজে কিছু করা। সেই দিনগুলোর পর, মিতা তার নিজের লক্ষ্য নিয়ে চলতে থাকে এবং সোহেলও সেই পথে তার প্রিয় মিতার পাশে থাকতে চায়। তবে এক সময়, মিতা চলে যায় শহরের উদ্দেশে।
পঞ্চম অধ্যায়: মিতার বিদায়
মিতার চলে যাওয়ার পরে সোহেল একাকী হয়ে পড়ে। কিন্তু সে জানে, তার পথ এখনও শেষ হয়নি। গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। সে জানে, আসল প্রেম আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়তার মধ্যে থাকে। মিতা তাকে শিখিয়েছিল যে, একজন মানুষের জীবনের সত্যিকারের উদ্দেশ্য তাকে একদিন খুঁজে বের করতে হয়।
ষষ্ঠ অধ্যায়: দৃঢ়তার পরীক্ষা
একদিন সোহেল সিদ্ধান্ত নেয়, সে গ্রামে একটি স্কুল স্থাপন করবে যেখানে সবাই সবার মতামত প্রকাশ করতে পারবে এবং নিজের সৃজনশীলতা বিকাশ করতে পারবে। তাকে এই কাজটি করতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে তার সংকল্প দৃঢ় ছিল, "যে-কেউ আমাকে বাধা দিতে আসুক, আমি আমার কাজটা করব।"
সোহেল স্কুলটি তৈরি করে, এবং সেখানে সবাই শিক্ষাগ্রহণ করতে শুরু করে। সে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে, অন্যদের নিজের জীবনকে উন্নত করতে সাহায্য করতে থাকে।
সপ্তম অধ্যায়: নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
একমাত্র সোহেলই জানত, শুধুমাত্র চিন্তা করে কিছু হয় না—কিছু বাস্তবে পরিণত করার জন্য কাজ করতে হয়। গ্রামবাসীরা তাকে শেখানো মূল্যবোধ, প্রকৃতি, আর জীবনের বাস্তবতা নিয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সাহায্য করেছিল।
মিতা, যে সোহেলকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, একদিন আবার ফিরে আসে। তবে সোহেলকে সে জানায়, সে তার জীবনকে এক নতুন পথে সাজাতে চায় এবং তার প্রিয় গ্রামকে, যা তার হৃদয়ে স্থায়ী স্থান করে নিয়েছে, সাহায্য করতে চায়।
অষ্টম অধ্যায়: সবার একত্রিত হওয়া
গ্রামের মানুষ যখন একসাথে কাজ করতে শুরু করে, তখন এক অদ্ভুত শান্তির সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে সোহেল, মিতা, এবং গ্রামবাসীরা একসাথে এক নতুন পৃথিবী তৈরি করতে পারে—যেখানে ভালোবাসা, সহানুভূতি, এবং বিশ্বাস ছিল মূল ভিত্তি।
শেষ অধ্যায়: পৃথিবী বদলে যাওয়া
এটি ছিল একটি নতুন পৃথিবী—যেখানে সবার দুঃখ, ব্যথা, অভাব, আশা এবং বিশ্বাস একে অপরকে শক্তি দিত। সোহেল, যে একদিন এক অজ্ঞাত শহরে এসেছিল, আজ সেখানে পৃথিবী বদলে দিয়েছে। এটি ছিল একটি পৃথিবী, যেখানে বিশ্বাস আর ভালোবাসা মানুষের শক্তি হয়ে ওঠে।
এইভাবেই সোহেল, মিতা, এবং গ্রামবাসীরা একে অপরকে সহায়তা করে এক সুন্দর নতুন পৃথিবী তৈরি করেছিল, যেখানে মানুষ কখনো একা ছিল না।
Comments
Post a Comment