স্মৃতির শহর - একটি আবেগঘন গল্প।
লিখক: মাসুম
ব্লগ : EditorPost
স্মৃতির শহর
“একবার যদি ফিরে তাকাতে, দেখতাম স্মৃতিগুলো এখনো বসে আছে ওই পুরনো জানালার ধারে...”
সকালটা অন্য সব দিনের মতোই ছিল, অথচ আজ যেন বাতাসে ছিল অন্যরকম কিছু। কফির কাপ হাতে জানালার ধারে বসে আমি তাকিয়ে ছিলাম সেই পুরনো শহরের দিকে। ঢাকার এই একটা জায়গা, যেখানে স্মৃতি আর বাস্তবতা একসাথে হাঁটে—বেইলী রোড।
আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয়, আর সবচেয়ে কষ্টের মানুষটা এখানেই হারিয়ে গিয়েছিল। নাম ছিল ওর—তানিয়া।
প্রথম পরিচয়
আমরা প্রথম দেখা করি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের এক দুপুরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সিঁড়িতে বসে ছিলাম, হাতে হুমায়ূন আহমেদের “বাদল দিনের প্রথম কদমফুল”। ও এসে সরাসরি বলল,
“এই বইটা আবার শুরু থেকে পড়লে কেমন হয়?”
আমি তাকালাম, আর এক মুহূর্তে যেন হৃদয়টা গলে গেল। তার চুল খোলা, চোখে একধরনের আত্মবিশ্বাস—এক অন্যরকম মেয়ে।
সেদিনের পর আমরা প্রায় প্রতিদিনই দেখা করতাম। বই, গান, চায়ের দোকান—সবকিছুতে আমরা ভাগাভাগি করতাম।
সেই রিকশার সন্ধ্যা
বেইলী রোডের ‘বইপাড়া’ থেকে বেরিয়ে এসে রিকশায় বসে আমরা অনেক দূর যেতাম। কখনো যেতাম ধানমন্ডির লেকে, কখনো নীরব শহীদ মিনার এলাকায়। সে রিকশা চালাতো সময়, আর আমরা শুনতাম হৃদয়ের গানের সুর।
ও একদিন বলেছিল,
“তোর চোখে কিছু আছে, যেটা কেউ দেখতে পায় না... আমি দেখি।”
আমি হেসেছিলাম। বলিনি, আমিও তোর চোখে দেখি আমার পুরো পৃথিবীটা।
সময়ের ছেঁড়া পাতায়
২০২০ সালে হঠাৎ করোনার ঢেউ সব কিছু ওলটপালট করে দিল। তানিয়া তখন তার পরিবারের সঙ্গে গ্রামে চলে যায়। শুরু হয় অনলাইন যোগাযোগ, ভিডিও কল, রাত জেগে চ্যাট।
কিন্তু ধীরে ধীরে সময়ের দেওয়ালে ফাটল ধরতে থাকে। বার্তা আসা কমে যায়, ফোন ধরা বন্ধ হয়ে যায়। আমি বুঝে যাই—সব কিছু আর আগের মতো নেই।
একদিন এক বন্ধুর মুখে শুনি—তানিয়া বিয়ে করে ফেলেছে। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই।
ফিরে দেখা
আজ পাঁচ বছর পর আমি ফিরে এসেছি এই শহরে। বেইলী রোডে সেই পুরনো চায়ের দোকান, পুরনো সেই বেঞ্চ, আর ওই রিকশাওয়ালা মামা এখনো আছে।
এক কাপ চা নিয়ে বসে আছি। ঠিক জানালার ওপাশে এক মেয়েকে দেখি—চোখে চশমা, কোলে একটা ছোট বাচ্চা। ওর চোখে যেন তানিয়ার ছায়া।
হয়তো এটাই জীবন। কিছু গল্প অপূর্ণই থেকে যায়। আর অপূর্ণতা থেকেই জন্ম হয় কবিতার, গল্পের... ব্লগের।
প্রতিচ্ছবি
আজ তানিয়াকে আর কিছু বলার নেই। ও থাকুক তার মতো, আমি লিখে যাই আমার মতো।
এই গল্প হয়তো তানিয়া কখনো পড়বে না, হয়তো জানবেও না আমার অনুভবের গভীরতা।
কিন্তু আমি জানি, এই ব্লগের পাতায়—আমি ওকে রেখে দিলাম।
চিরদিনের জন্য।
শেষ কথা:
এই গল্পটা শুধু আমার নয়, হাজারো মানুষের, যারা কারো অপেক্ষায় থাকে... অথবা কোনো নামহীন শহরে হারিয়ে ফেলা এক প্রিয় মুখের স্মৃতিতে বাঁচে।
আপনার মতামত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ!
নিছে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
Comments
Post a Comment