পিয়ানোর নীচে রাখা চিঠি
ভাঙা পিয়ানোটা বাজে না, তবু কিছু বলে...
তিন বছর পর বাড়ি ফিরেই ইশরাত যেটা প্রথম করলো, তা হলো বসার ঘরে রাখা পুরনো পিয়ানোটা ধুলোমুক্ত করা।
পিয়ানোটা এখন বাজে না, ধাতুর তারগুলো জং ধরে গেছে, আর চাবিগুলো কেমন যেন নিঃসঙ্গ।
কিন্তু এই পিয়ানোর সাথেই জড়িয়ে আছে তার জীবনের সবচেয়ে নরম আর তীব্র এক স্মৃতি—ফারহান।
ফারহান: যে শুধু ভালোবাসত, কিন্তু কিছু বলত না
ছোটবেলায় ইশরাত পিয়ানো শিখতো, আর তার ঠিক পাশের ঘরের বাসিন্দা ছিলো ফারহান। একদিন প্রতিদিন, নিয়ম করে সে বসে থাকত ছাদের কার্নিশে, আর শুনত সেই পিয়ানোর সুর। কখনো বলে নি কিছু, শুধু শুনে যেত।
ইশরাতও জানত ফারহান ভালোবাসে, কিন্তু সেই ভালোবাসাটা অদ্ভুতভাবে গুছানো ছিল—চোখে, নীরবতায়, আর প্রতীক্ষায়।
বিদায়ের দিন ও এক অপূর্ণ চুম্বন
কলেজে ভর্তির জন্য ইশরাত যখন বিদেশে চলে যাচ্ছিল, সেদিনও ফারহান কিছু বলেনি। শুধু স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল, চোখে সেই একই মুগ্ধ চাহনি নিয়ে।
ট্রেন ছাড়ার আগে ইশরাত শুধু বলেছিল,
"তুই যদি কিছু না বলিস, আমি কি ধরব কিছু ছিলই না?"
ফারহান একটু হেসেছিল—অসহায়ভাবে, নিঃশব্দে।
কিছুক্ষণ পর, ট্রেনটা যখন গতি নেয়, ফারহান ফিসফিস করে বলেছিল,
"চিঠিটা পিয়ানোর নিচে আছে..."
তিন বছর পর খুঁজে পাওয়া চিঠি
সেদিনের কথা তখন আর মনে ছিল না। কিন্তু ধুলো ঝাড়তে গিয়ে হঠাৎ নিচে পড়ে গেল এক ভাঁজ করা হলুদ হয়ে যাওয়া কাগজ।
চোখে পানি এসে গেল যখন দেখলো, সেই চিঠি এখনো সেখানেই আছে, পিয়ানোর নিচে... ঠিক যেমনটা বলেছিল ফারহান।
চিঠিতে লেখা:
“ইশরাত,
প্রতিদিন তোর পিয়ানোর সুর শুনতাম, ভাবতাম তুই যদি কখনো থেমে যাস, আমি কীভাবে বাঁচব।
আমি তোকে ভালোবাসি, কিন্তু তোর চোখে ভালোবাসার ভাষা ছিল, শব্দের প্রয়োজন মনে হয়নি।
আজ তুই চলে যাচ্ছিস, তুই যদি কখনো ফিরে আসিস, আর এই চিঠি খুঁজে পাও, জানিস, আমি আজও তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
হয়তো ওই কার্নিশেই, হয়তো পিয়ানোর সুরে…”
সব অপেক্ষার একটা শেষ হয়?
চিঠিটা হাতে নিয়ে ইশরাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে গেল। সে দৌড়ে গেল ছাদে। কিন্তু ছাদে ফারহান নেই।
নিচে পা ঝুলিয়ে বসে কেউ নেই, হাওয়া শুধু নিঃসঙ্গভাবে বইছে।
হঠাৎ পাশের বিল্ডিং থেকে এক শিশু বলল,
“আপু, আপনি কি ইশরাত আপু? এক কাকু প্রায়ই এখানে এসে বসে থাকতেন, বলতেন একদিন একটা মেয়ে ফিরবে।”
শেষ দেখা
পরের সপ্তাহেই ইশরাত খুঁজে বের করলো ফারহানকে—এক ছোট্ট ক্যাফেতে বসে সে আজও অদ্ভুতভাবে চুপচাপ, চা খাচ্ছে, আর একটা খাতায় কিছু লিখছে।
ইশরাত পাশে গিয়ে বসে বলল,
“তোর চিঠিটা আমি পেয়েছি... এবার বাজাও না, নতুন করে সুর তুলি?”
ফারহান এবার তাকিয়ে বলল,
“তুই কি এবার ফিরেছিস, নাকি আবার চলে যাবি?”
ইশরাত মুচকি হাসে,
“এবার তুই বল, আমি রয়ে যাবো।”
শেষ কথা:
ভালোবাসা সব সময় চিৎকার করে জানাতে হয় না। কখনো কখনো, একটা পিয়ানোর নিচে রাখা চিঠিও হয়ে ওঠে ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর ভাষা।
"এই লেখাগুলো মূলত কল্পনাপ্রসূত এবং শুধুমাত্র পাঠকের অনুভূতি জাগানোর উদ্দেশ্যে।"
Tags:Bangla Story
, Emotional
, Letter
, Real Life
।Bangla Love Story
, Heart Touching
, Bangla Blog
, Emotional Story
Comments
Post a Comment