গরিবের অনাহার | একটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া বাস্তব গল্প
লিখেছেন: মাসুম | EditorPost
অধ্যায় ১: অতীতের ছায়া
লাইলী বেগমের জীবনের শুরুটা এমন ছিল না। হ্যাঁ, কষ্ট ছিল, অভাব ছিল, কিন্তু ভালোবাসার অভাব ছিল না। হাকিম আলী, লাইলীর স্বামী, ছিলেন একজন সহজ-সরল খেতমজুর। প্রতিদিন সকালে মাঠে কাজ করতে যেতেন, আর সন্ধ্যায় ফিরতেন লাইলীর হাতে গরম চা খেতে খেতে ক্লান্তি মুছতে।
তাদের সংসার ছোট ছিল, কিন্তু মনের দিক থেকে ছিল রাজপ্রাসাদের মতোই সমৃদ্ধ। তিন বছরের মাথায় এল একমাত্র সন্তান—সাব্বির। তখনই হাকিম বলেছিল, “এই ছেলেটা বড় হয়ে অনেক কিছু করবে, আমার মতো শুধু লাঙল ধরেই জীবন কাটাবে না।”
কিন্তু বিধাতা অন্য কিছু লিখে রেখেছিলেন। এক বর্ষার রাতে হাকিম আর বাড়ি ফিরল না। কাজ শেষে ফেরার পথে নদীর ধারে স্লিপ করে পড়ে যায়। তীব্র জ্বর, ডাক্তার-ওষুধের টাকা ছিল না। কয়েকদিনের ভেতরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
অধ্যায় ২: সংগ্রামের সকাল
স্বামীর মৃত্যুর পর লাইলীর কাঁধে নেমে আসে পুরো সংসারের ভার। তখন তার বয়স মাত্র পঁচিশ। নিজের জীবন থেমে গেছে, কিন্তু সাব্বিরের জীবন তো থামিয়ে রাখা যায় না।
প্রতিদিন ভোর ৫টায় উঠে পাশের গ্রামের হাটে যায় কাজের খোঁজে। কোন বাড়িতে ধান শুকাতে হবে, কোথাও ঘাস কাটা—লাইলী যেটাই পায়, সেটাই করে। দিনে ২০০ টাকা রোজগার হলে মনে হয় আজ খুব বেশি আয় হয়েছে।
কিন্তু সেই টাকায় চাল, তেল, সাব্বিরের স্কুলের খরচ আর নিজের অসুখ-বিসুখ—সব কিছু চলে না।
অধ্যায় ৩: ক্ষুধার দিনলিপি
সবচেয়ে ভয়ানক মুহূর্ত আসে তখন, যখন তিন-চারদিন টানা কোনো কাজ মেলে না। চুলা ঠাণ্ডা পড়ে থাকে। সাব্বির পেটে ক্ষুধা নিয়ে বলে,
“মা, আজ ভাত হবে তো?”
লাইলী চোখের জল গোপন করে বলে,
“আজ একটু কষ্ট কর, কাল ভাত পাবি।”
কিন্তু কাল যে কবে আসবে, লাইলী নিজেই জানে না।
বৃষ্টির দিনে দোকানিদের ফেলে দেওয়া সবজির খোঁজে যায়। আধপচা পেঁপে, ভাঙা টমেটো আর কখনো চালের থলিতে আটকে থাকা কিছু দানা। সেগুলো জোগাড় করেই রান্না হয় ছোট্ট এক হাঁড়িতে।
একদিন সন্ধ্যায় সাব্বির সেই পাতলা ভাত খেতে খেতে বলে,
“মা, আজ তো অনেক মজা! মনে হচ্ছে ঈদ!”
লাইলী হেসে ওঠে, অথচ ভিতরে কান্না জমে পাহাড়।
অধ্যায় ৪: আশার আলো
একদিন হঠাৎ একটি NGO থেকে মহিলা কর্মী আসে। লাইলীর কষ্টের কথা শুনে তাকে সেলাই মেশিন দেয়। শুরু হয় নতুন অধ্যায়।
প্রথমে গ্রামের মেয়েদের জামা কাপড় সেলাই করে, পরে বাজারে কাপড় সাপ্লাই দেয়। ধীরে ধীরে মাসে ৩-৪ হাজার টাকা উপার্জন হয়।
সাব্বির আবার স্কুলে যেতে শুরু করে। খাওয়ার ব্যবস্থা হয়, রাতের চুলা আবার নিয়মিত জ্বলে ওঠে।
শেষ অধ্যায়: গরিবের অনাহার থেকে আলোর গল্প
“গরিবের অনাহার” শুধু একটা গল্প নয়, এটা হাজারো মায়ের প্রতিচ্ছবি। তাদের চোখের জল, মুখের হাসি আর অন্তরের সাহস আমাদের সমাজকে প্রশ্ন করে—
“কেন এখনো এমন অনাহার?”
লাইলী বেগমরা থেমে যায় না। তারা আবার দাঁড়ায়, আবার লড়াই করে। এবং আমাদের উচিত এইসব সংগ্রামী মানুষদের পাশে দাঁড়ানো—দয়ায় নয়, ন্যায়ের জায়গা থেকে। শেষ কথা:
"গরিবের অনাহার" কোনো কাল্পনিক গল্প নয়, এটি আমাদের আশেপাশেরই বাস্তব চিত্র। এই কষ্ট, এই অভাব আমাদের দয়া নয়, মানবিক ন্যায়বোধ দিয়ে দেখতে হবে।
লাইলীর গল্প লিখে শেষ করা যায় না—কারণ এটা EditorPost
Comments
Post a Comment