ইটের নিচে চাপা স্বপ্ন – এক ছাপোষা ছেলের বাস্তব কাহিনি | বাংলা ইমোশনাল গল্প"
লেখক : মাসুম
ব্লগ : EditorPosts
গল্প শুরুঃ
একটা ভাঙাচোরা গ্রামে, নোনা মাটির গন্ধে ভরা এক সন্ধ্যায় জন্ম হয়েছিল রুবেলের। বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী, সংসারে খাবার কম—কিন্তু ভালোবাসা অফুরন্ত। ছোট থেকেই রুবেল জানতো, তার জীবনটা বাকি সবার মতো নয়। সকালে স্কুল, বিকেলে বাবার সাথে কাজ করা, আর রাতে মোমের আলোয় পড়াশোনা—এটাই ছিল তার জীবনের ছন্দ।
রুবেলের একটাই স্বপ্ন ছিল—একদিন একটা ভালো বাড়ি বানাবে, যেখানে মায়ের জন্য আলাদা একটা ঘর থাকবে। খাওয়ার পরে বারান্দায় বসে চা খেতে পারবে, আর বৃষ্টির রাতে ছাদে উঠে চাঁদ দেখতে পারবে।
কিন্তু স্বপ্ন তো সহজে ধরা দেয় না। ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। সংসারের বোঝা তখন রুবেলের কাঁধে। সে পড়া ছেড়ে রিকশা চালানো শুরু করে। চোখের জল লুকিয়ে সে মায়ের মুখে হাসি রাখতে চেষ্টা করত।
দিন যায়, মাস যায়। রুবেল বড় হয়, কাজ শেখে। রাজমিস্ত্রির হেলপার থেকে ধীরে ধীরে সে নিজেই ছোটখাটো ঠিকাদার হয়। নিজের ঘাম ঝরিয়ে একটু একটু করে জমাতে থাকে টাকা।
কিন্তু জীবন বড় নিষ্ঠুর। এক রাতে তার মা হৃদরোগে মারা যায়। সেই রাতে রুবেল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছিল—
"মা, তোকে ঘর দিতে পারলাম না… কিন্তু আমি এখনো স্বপ্ন দেখি। তুই আমার সাথে থাকিস।”
আরও কয়েক বছর পর, যখন পকেটে ছিল মাত্র চার লাখ টাকা, তখন রুবেল এক বিশাল সিদ্ধান্ত নেয়—
নিজের হাতে, নিজের ঘর বানাবে।
ইট, বালি, সিমেন্ট—সব নিজের হাতে টানাটানি করে আনে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দেয়াল তোলে। সে জানে, ঘর মানেই শুধুই ইট-কাঠ নয়, ঘর মানেই স্বপ্ন। প্রতিটি কোণে যেন তার ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে। ডাইনিং রুমের প্রতিটা ইঞ্চিতে তার মায়ের গল্প, বারান্দার প্রতিটা ইটে তার চোখের জল, আর ছাদের সিঁড়িতে আজো সে চুপচাপ বসে চাঁদ দেখে—মায়ের কথা মনে করে।
এখন সে ঘরের ভিতর থাকে তার স্ত্রী, ছোট একটা ছেলে, আর রুবেল। তার ছেলে যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন সে তার মায়ের ব্যবহৃত পুরনো কাপড়ে জড়ানো একটা বাক্স খোলে—যার ভিতরে তার প্রথম স্কেচ, একটা ছোট প্লাস্টিকের চেয়ার, আর একটা চিঠি—
"মা যদি একদিন না থাকি, তুই কখনো থেমে যাবি না—তুই পারবি রে, বাবা।"
আজ রুবেল তার ঘরের বারান্দায় বসে, এক কাপ চায়ে চুমুক দেয়। মাথার উপর ছাদ, পাশে নিজের পরিবার, আর বুকের ভিতর শান্তি—
কারণ তার স্বপ্ন আর ইট এখন এক হয়ে গেছে।
শেষ দৃশ্য (গল্পের সমাপ্তি):
রুবেল এখন আর আগের মতো নেই। গায়ে রোদ লেগে গেছে, পায়ে কাঁদা, তবু মুখে হাসি। নিজের বানানো ছোট ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে দেখে সূর্য ডুবছে। পকেটে খুব বেশি টাকা নেই, কিন্তু বুক ভরা শান্তি।
একটা ঘর… একটুকু ছাদ… আর নিজের অর্জিত প্রতিটি ইটের গল্প—এটাই তার বড় জয়।
তার চোখে পানি আসে, কিন্তু এইবার সেটা দুঃখের নয়—এইবার সেটা গর্বের।
ভাঙা স্বপ্নও জোড়া লাগে, যদি ইচ্ছের দেয়াল মজবুত হয়” — রুবেল মনে মনে বলে, আর দূরে হারিয়ে যায় সন্ধ্যার আলোয়।
Comments
Post a Comment