ব্যবসায়িক প্রতারণা: বন্ধুত্ব, বিশ্বাস আর ভাঙনের এক গল্প
লিখক: মাসুম
ব্লগ : EditorPost
পরিচয়:
সুমন আর রাকিব—দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু। একসাথে ক্লাস, টিউশন, আড্ডা—সব জায়গায় তারা ছিল ছায়ার মতো। বন্ধুত্বের এমন বন্ধন যেটা দেখে সবাই বলত, “এই দুজন যদি একসাথে কিছু করে, একদিন বড় কিছু করবে।”
তাদের স্বপ্ন ছিল, একদিন নিজের একটা বিজনেস দাঁড় করাবে। আর অবশেষে, সেই সুযোগ একদিন এল।
স্বপ্নের শুরু:
সুমনের বাবা ছোট একটা বিজনেস করতেন, যেখানে তিনি কাপড়ের পাইকারি সরবরাহ করতেন। সুমনের মাথায় একদিন এক দারুণ আইডিয়া আসে—"যদি আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং আর মডার্ন স্টাইল নিয়ে কাপড়ের অনলাইন ব্যবসা শুরু করি, তাহলে তো বাজার কাঁপিয়ে দিতে পারি!"
রাকিব তো এমনিতেই ফেসবুক মার্কেটিংয়ে পটু। সে সঙ্গে সঙ্গে রাজি। শুরু হয় প্ল্যানিং—ব্যবসার নাম, লোগো, ওয়েবসাইট, ইনস্টাগ্রাম পেজ, সব কিছু।
তারা মিলেমিশে ব্যবসার নাম রাখে “StyleCraft”—বাংলাদেশি ট্র্যাডিশনাল পোশাকের আধুনিক উপস্থাপনা।
প্রথম সাফল্য:
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা শুরু করল ফেসবুকে প্রচারণা। প্রথম দুই মাসেই কয়েকটা অর্ডার আসে। তারপর আসে আরও বড় চমক—একজন ইনফ্লুয়েন্সার তাদের থেকে একটি শাড়ি কিনে রিভিউ দেয়। ব্যাস! এরপর অর্ডারের বন্যা।
তারা রাতে ঘুমাতে পারত না, কারণ সকালে কুরিয়ার করতে হতো, দুপুরে কাস্টমারের ইনবক্স সামলাতে হতো, আর রাতে নতুন ডিজাইন সিলেক্ট করতে হতো।
এই কষ্টেও ছিল আনন্দ—কারণ এটা ছিল তাদের স্বপ্নের পথ।
ভেতরের লোভ:
ধীরে ধীরে, রাকিব ব্যবসার ফিনান্সিয়াল কন্ট্রোল পুরোপুরি নিজের হাতে নিতে চায়। সে বলে, “তুই প্রোডাক্ট আর ডিজাইন দেখ, আমি অ্যাকাউন্ট দেখব।” সুমন, বন্ধুর ওপর শতভাগ বিশ্বাস করে রাজি হয়ে যায়।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সুমনের চোখে ধীরে ধীরে কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
ব্যাংক স্টেটমেন্টে অর্ডারের টাকা পুরোটা দেখা যাচ্ছে না, কিছু কাস্টমার অভিযোগ করছে পেমেন্টের পরও প্রোডাক্ট পায়নি, অথচ রাকিব বলে সব ঠিক আছে।
প্রথম ধাক্কা:
একদিন, একজন কাস্টমার ইনবক্সে লেখে—
“আমার অর্ডারের টাকা পাঠিয়েছি বিকাশে, কিন্তু কোনো কনফার্মেশন পাইনি।”
সুমন অবাক। সে দেখে বিকাশ নাম্বারটা ব্যক্তিগত একটি নম্বর, যেটা রাকিব গোপনে চালাচ্ছে।
সুমনের সন্দেহ বাড়ে। সে নিজের মতো করে তদন্ত শুরু করে।
এক বন্ধুর সাহায্যে সে রাকিবের পার্সোনাল বিকাশ অ্যাকাউন্ট ট্র্যাক করে এবং দেখে সেখানে লক্ষাধিক টাকা জমা আছে—যা ব্যবসার টাকাই হওয়া উচিত ছিল।
মুখোমুখি:
সুমন আর অপেক্ষা করে না। একদিন রাতে, সে রাকিবকে অফিসে ডাকে।
"রাকিব, কতদিন ধরে এই হচ্ছে?"
রাকিব চুপ। কিছুক্ষণ পর মাথা নিচু করে বলে,
"আমি ভেবেছিলাম, ব্যবসার মুনাফা তো আমাদেরই, কিছু অগ্রিম নিয়েছি... ভাবছিলাম পরে মিলিয়ে ফেলব।"
সুমনের মুখ কাঁপছে—রাগ, দুঃখ, আর হতাশায়। সে বলে,
"বন্ধু তোকে ভাবতাম ভাইয়ের মতো। তুই বিশ্বাস ভেঙেছিস, টাকা নয়—স্বপ্ন ভেঙেছিস।"
ভাঙন:
সুমন রাকিবকে জানিয়ে দেয়—ব্যবসায় তার আর কোনো স্থান নেই। সে লিগ্যাল পথে নিজের ইনভেস্টমেন্ট ফেরত চাইবে। রাকিব কিছুক্ষণ চুপ থেকে অফিস ছেড়ে চলে যায়।
তারপর আর কখনো ফিরে আসেনি।
নতুন শুরু:
সুমন নিজের একক উদ্যোগে “StyleCraft” কে আবার দাঁড় করায়। সে ফিনান্সিয়াল কন্ট্রোল নেয়, ট্রাস্টেড কিছু কর্মী রাখে, এবং ছোট হলেও নতুন করে শুরু করে।
প্রথম কয়েকমাস কঠিন ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে, আবারও অর্ডার আসতে থাকে।
এবার তার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে জানে—ভালো ব্যবসা শুধু লাভ দিয়ে হয় না, হয় বিশ্বাস আর সততা দিয়ে।
শেষ কথা:
বন্ধু দিয়ে ব্যবসা শুরু করলে ভালো, কিন্তু চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করলে চলবে না। ব্যবসা মানে দায়িত্ব, স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা।
সুমনের গল্প আমাদের শেখায়—যখন প্রতারণা হয়, তখন কষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু সেটাই হয় সবচেয়ে বড় শিক্ষা।
গল্প টা মন ছুয়ে গেলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না, বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন!
Comments
Post a Comment