গল্প : অজানা পথের খোঁজে
নতুন শহরে এসে, প্রথমবারের মতো অনুভব করেছিল তানভীর এক অদ্ভুত শূন্যতা। ছোটো গ্রাম থেকে উঠে আসা তানভীর, যেখানে মানুষ একে অপরকে চেনে, সেখানে সে নিজেকে সম্পূর্ণ অচেনা একটি শহরে ফেলে দিয়েছিল। শহরের অসংখ্য মানুষের ভিড়ে, হাউহাউ করে চলা যানবাহন আর অন্ধকারে ঢাকা রাস্তা তার মনকে আরো একা করে দিচ্ছিল। বড়ো শহরের প্রতিযোগিতামূলক জীবন, যেখানে সবাই একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে সে কিভাবে নিজের স্থান খুঁজবে—এটাই ছিল তার বড় প্রশ্ন।
তানভীরের পরিবার তাকে এখানে পাঠিয়েছে, যাতে সে ভালো কিছু করতে পারে। কিন্তু সে জানত, তার সাথেই কিছু বিশেষ ছিল। ছোটো থেকেই তার মধ্যে একটা আলাদা স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সেই স্বপ্নের পথে চলতে গিয়ে সে কখনোই আত্মবিশ্বাস পায়নি। শহরের শোরগোল, নতুন মানুষের মুখ, এবং সবকিছু এতটাই অচেনা ছিল, যে সে কখনোই নিজেকে পুরোপুরি একাত্ম করতে পারেনি।
কিছুদিন পর, তার কাজের চাপ বাড়তে শুরু করেছিল। একদিন অফিসে বসে কাজ করার সময়, সহকর্মী অরণ্য এসে বলল, "তুমি জানো, আজকালকার মানুষ শুধুমাত্র সফল হতে চাইলে বড়ো হতে চায় না। তারা চায় তাদের নিজস্ব পথ খুঁজে নিতে।"
তানভীর প্রথমে অরণ্যকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু অরণ্যের কথাগুলো তার মনে স্থির হয়ে গেল। সে ভাবতে শুরু করল—তাহলে কি সত্যিই অন্যদের পথ অনুসরণ করার জন্য তাকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে? সে কি ভুল পথে চলছিল?
একদিন, তানভীর শহরের এক কফি শপে বসে তার প্রিয় লেখকের বইটি পড়ছিল। তখনই তার মনে এল, কেন না সে নিজের ভালোবাসা আর আগ্রহের দিকে একটু মনোযোগ দেবে? সে জানত, তার প্রিয় বই, লেখালেখি, ও সৃষ্টির প্রতি আগ্রহ সব কিছুই তাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে পারে।
তানভীর সিদ্ধান্ত নিল, সে আর কেবল অন্যদের পথ অনুসরণ করবে না, বরং তার নিজের পথ তৈরি করবে। সে বুঝতে পেরেছিল, যেটা তাকে সত্যিকারভাবে আনন্দ দেয়, সেটাই তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পরের কয়েকটা মাস সে নিজের ওপর কঠোর পরিশ্রম শুরু করল। প্রথমে সে তার ব্লগ চালু করল, যেখানে বই, সাহিত্য এবং লেখালেখি নিয়ে লিখতে শুরু করল। নিজের ছোটো উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে গিয়েও অনেক বাধা অতিক্রম করতে হলো। অনেকদিনের পরিশ্রম, রাতের পর রাত জেগে লিখে, সে কিছুটা হলেও ফল পেল। তার ব্লগটি কিছু পাঠক পেয়েছিল, এবং ধীরে ধীরে মানুষের আগ্রহ বাড়তে শুরু করল। সে বুঝতে পারল, সাফল্য শুধু বড়ো হবার মধ্যে নয়—বরং নিজের ভালোবাসা আর প্যাশনকে অনুসরণ করাতেই সত্যিকার সাফল্য আসে।
তার ব্লগ থেকে কিছু পাঠক তাকে পরিচিত করিয়ে দিলেন। এরপর সে অনলাইনে একটি ছোট ব্যবসা শুরু করল। এটি ছিল একটি অনলাইন বুকস্টোর, যেখানে বিশেষ ধরনের বই এবং সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হতো। তানভীরের ব্যবসা যেমন বেড়ে গেল, তেমনি তার পরিচিতি আর বিশ্বাসও মানুষের মধ্যে বাড়তে থাকল। তার কাজের প্রতি নিবেদন, পরিশ্রম আর সততা তাকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে সাহায্য করল।
তানভীরের জীবনে সেই শূন্যতা আর নেই। আজ সে নিজে একজন উদ্যোক্তা, একজন লেখক, এবং একজন সফল ব্যক্তি। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, সে বুঝতে পেরেছিল—সাফল্য শুধু বড়ো হওয়া নয়, বরং নিজের পথ খুঁজে পেতে এবং সেই পথে চলতে পারাই আসল।
তানভীর আজ সফল, কিন্তু সে জানে, এই সফলতার পিছনে তার একান্ত চেষ্টা, পরিশ্রম আর নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিল। সে নিজের জগত তৈরি করেছে, যেখানে সে নিজের শর্তে, নিজের রীতি অনুযায়ী বাঁচছে।
The End....
"এই লেখাগুলো মূলত কল্পনাপ্রসূত এবং শুধুমাত্র পাঠকের অনুভূতি জাগানোর উদ্দেশ্যে।"
Comments
Post a Comment