আলো ফেরা দিনের গল্প - হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া একটি পারিবারিক অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি
লেখক : Masum
রাতের শহরটা যেন আজ কিছুটা বেশি নিরব। ছাদে দাঁড়িয়ে নীলু চাঁদের আলো গায়ে মেখে পুরনো দিনের কথা ভাবছে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে বাবার মুখটা—শান্ত, শক্ত আর ত্যাগে ভরা।নীলু এখন শহরের এক নামকরা স্কুলের শিক্ষিকা। কিন্তু সেই পথটা সহজ ছিল না।
গ্রামের ছোট ঘর থেকে শহরের শিক্ষকতা পর্যন্ত
গ্রামের ছোট একটি মাটির ঘরে ছিল তাদের বাস। বাবা হুমায়ূন সাহেব ছিলেন একজন দিনমজুর, মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে নীলুই বড়। সবার চাহিদা, দরকার—সবই যেন বাবার কাঁধে চাপানো।
নীলুর স্কুলে ভর্তি হতেই বাবার চোখে জল। স্কুলে সবার বই-খাতা থাকে, আর তার একটা খাতাও ছিল না অনেক দিন। বাবা বাজার থেকে একদিন কাগজের ঠোঙা কুড়িয়ে এনে বলেছিলেন, “মা রে, এগুলায় যদি লেখ কষ্ট হবে না তো?” সে খাতায়ই লিখে লিখে আজ সে শিক্ষিকা।
একদিনের কষ্ট, সারা জীবনের আলোর পথ
এক সন্ধ্যায় বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হালকা জ্বর, পরে শ্বাসকষ্ট। হাসপাতালে নেয়ার মতো টাকা নেই। মা ঘর থেকে একটা পুরনো কানের দুল বিক্রি করে ২০০০ টাকা তুলে দিলেন। সেই টাকাতেই বাবার চিকিৎসা শুরু।
নীলু সেদিন ঠিক করল, আর নয়—এই দারিদ্র্যের বৃত্ত ভাঙতেই হবে।
দিনরাত পড়ে HSC-তে জিপিএ ৫, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। টিউশনি করে, কাপড় সেলাই করে নিজের খরচ চালায়। বাবা-মা যেন তার চোখের সামনে সব সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন—ভালবাসা আর দায়িত্ব নিয়ে।
ফিরে দেখা সেই মুহূর্ত
স্কুলে প্রথম চাকরি পেয়ে মায়ের হাতে প্রথম বেতন তুলে দিলো—মাত্র ৫ হাজার টাকা। কিন্তু মা কাঁদলেন যেন লক্ষ টাকার সুখ পেয়ে গেছেন।
বাবা বলেছিলেন, “তুই আলো দেখালি মা... আমরা তো অন্ধকারেই ছিলাম।”
নীলু আজও ছুটির দিনে বাবার সেই কুড়িয়ে আনা ঠোঙাগুলো রাখে তার স্মৃতির বাক্সে। কারণ, ঐ ঠোঙার কাগজেই লেখা ছিল তার স্বপ্ন, তার আলোর পথ।
গল্পের বার্তা:
একটি পরিবারের আত্মত্যাগ, ভালবাসা আর মেয়ের সংকল্প—এই গল্প সেটাই বলে। হাজারো পরিবারের জীবনে এমন নীলুরা প্রতিদিন জন্ম নেয়, আলো ফোটায়।
EditorPost - ভালোবাসার গল্পের ঠিকানা
Comments
Post a Comment