Featured
- Get link
- X
- Other Apps
নীল প্রজাপতির খোঁজে
নীল প্রজাপতির খোঁজে
আকাশটা মেঘলা ছিল সারাদিন। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল, আর ঠান্ডা বাতাস বইছিল। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, পুরোনো একটা কফি শপে বসে ছিল রাইসা। কফির ধোঁয়া আর বৃষ্টির শব্দ—সব মিলিয়ে একটা অন্যরকম পরিবেশ।
রাইসা একা বসে ছিল, কিন্তু তার মনটা পড়ে ছিল অনেক দূরে। কয়েক বছর আগে তার সাথে আবিরের পরিচয় হয়েছিল এই শহরেই। আবির ছিল একজন ফটোগ্রাফার, আর রাইসা একটি কলেজের ছাত্রী। প্রথম দেখাতেই রাইসার মনে হয়েছিল, আবির যেন তার বহুদিনের চেনা।
তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়, তারপর সেই বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণত হয়। তারা একসাথে অনেক সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আবিরকে কাজের জন্য অন্য শহরে চলে যেতে হয়। যাওয়ার আগে আবির রাইসাকে কথা দিয়েছিল, সে আবার ফিরে আসবে।
কিন্তু সময় চলে গেছে, আর আবির আর ফেরেনি। রাইসা অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। সে বুঝতে পারছিল, আবির হয়তো আর ফিরে আসবে না।
হঠাৎ কফি শপের দরজা খুলে গেল, আর রাইসা দেখল আবির দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখেমুখে সেই আগের হাসি। রাইসা যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না, আবির ফিরে এসেছে।
আবির এগিয়ে এসে রাইসার হাত ধরল। "আমি জানি, আমি অনেক দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি রাইসা। আমি সবসময় তোমার কথাই ভেবেছি।"
রাইসার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। সে আবিরের হাত শক্ত করে ধরল। "আমিও তোমাকে ভুলতে পারিনি আবির।"
বৃষ্টি চলতেই থাকল, আর রাইসা ও আবির—তারা দুজনে আবার একসাথে হয়ে গেল। কফি শপের জানালা দিয়ে বাইরের বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তারা বুঝতে পারল, তাদের ভালোবাসা সব বাধা পেরিয়ে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে।
দ্বিতীয় পাট
নীল প্রজাপতি দেখতে ভালোবাসে অরিত্র। ছোটবেলার এক স্মৃতিতে জড়িয়ে আছে এই প্রজাপতি। গ্রামের শান্ত পরিবেশে, দাদুর সাথে সে প্রথম নীল প্রজাপতি দেখেছিল। সেই থেকে তার স্বপ্ন, সে আবার একটি নীল প্রজাপতি খুঁজে পাবে।
অরিত্র এখন শহরের ব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছে। একটি আর্ট গ্যালারিতে কাজ করে সে। একদিন গ্যালারিতে আসে অহনা। অহনা একজন লেখিকা, তার চোখে স্বপ্ন আর মুখে একরাশ হাসি। প্রথম দেখাতেই অরিত্রের ভালো লাগে অহনাকে।
অহনা গ্যালারিতে একটি প্রদর্শনীর জন্য তার লেখা কবিতার বই নিয়ে এসেছে। অরিত্র অহনার কবিতার ভক্ত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে কথা শুরু হয়, ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয়। অরিত্র জানতে পারে, অহনা প্রকৃতি ভালোবাসে, আর তার লেখায় প্রায়ই প্রকৃতির কথা ফুটে ওঠে।
একদিন অরিত্র অহনাকে তার ছোটবেলার গ্রামের কথা বলে। নীল প্রজাপতির গল্প শুনে অহনা খুব উৎসাহিত হয়। সে অরিত্রকে বলে, "আমরা দুজনে মিলে নীল প্রজাপতি খুঁজতে যেতে পারি।"
অরিত্র আর অহনা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তারা পুরনো দিনের সেই গ্রামে গিয়ে পৌঁছায়, যেখানে অরিত্রের শৈশব কেটেছে। গ্রামের সবুজ মাঠ, নদীর কলকল শব্দ, আর পাখির গান—সবকিছু অরিত্রকে মুগ্ধ করে তোলে।
তারা দুজনে মিলে প্রজাপতি খুঁজতে থাকে। দিনের পর দিন তারা গ্রামের পথে হাঁটে, জঙ্গলে যায়, কিন্তু নীল প্রজাপতিকে খুঁজে পায় না। অরিত্র হতাশ হয়ে পড়ে, কিন্তু অহনা তাকে সাহস দেয়।
একদিন তারা গ্রামের পাশে একটি পুরোনো বাগানে যায়। সেখানে তারা দেখতে পায়, অজস্র ফুল ফুটে আছে। হঠাৎ অহনা চিৎকার করে ওঠে, "অরিত্র, দেখো!"
অরিত্রের চোখ অনুসরণ করে দেখে, একটি নীল প্রজাপতি ফুলের উপর বসে আছে। তার চোখ আনন্দে চিকচিক করে ওঠে। সে প্রজাপতিটির দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন তার বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
অরিত্র বুঝতে পারে, নীল প্রজাপতি খোঁজার আসল উদ্দেশ্য ছিল অহনাকে খুঁজে পাওয়া। অহনার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত তার কাছে মূল্যবান।
তারা দুজনে হাতে হাত রেখে বাগানের মধ্যে হাঁটে। অরিত্র অহনাকে বলে, "আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
অহনা হেসে অরিত্রের দিকে তাকায়। "আমিও তোমাকে ভালোবাসি।"
সূর্য অস্ত যায়, আর তারা দুজনে—নীল প্রজাপতির মতো রঙিন হয়ে ওঠে তাদের জীবন।
তৃতীয় পাট
অরিত্র আর অহনা শহরের কোলাহল ছেড়ে অরিত্রের গ্রামের বাড়িতে কিছুদিন থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। অরিত্রের দাদু ছিলেন একজন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। তাঁর ছোটবেলার স্মৃতিগুলো অরিত্রের মনে আজও অমলিন। অহনাও অরিত্রের পরিবারের সাথে পরিচিত হয় এবং খুব সহজেই সবার মন জয় করে নেয়।
কিন্তু তাদের এই শান্ত জীবন হঠাৎ করেই একটা ঝড়ের মতো আসে। অরিত্রের বাবা, যিনি একজন ব্যবসায়ী, তিনি শহরে বড়োসড়ো ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হন। ঋণের দায়ে তিনি জর্জরিত হয়ে পড়েন। অরিত্র জানতে পারে, তার বাবার কোম্পানি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।
অরিত্র বুঝতে পারে, এই মুহূর্তে তার পরিবারের পাশে থাকা উচিত। সে অহনাকে জানায়, তাকে কিছুদিনের জন্য শহরে ফিরে যেতে হবে। অহনা অরিত্রের পরিস্থিতি বুঝতে পারে এবং তাকে সমর্থন করে।
শহরে ফিরে অরিত্র বাবার ব্যবসায় সাহায্য করার চেষ্টা করে। সে তার সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে বাবার ঋণ পরিশোধ করতে চায়। কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। অরিত্র হতাশ হয়ে পড়ে, বুঝতে পারে না কী করবে।
এই কঠিন সময়ে অহনা অরিত্রের পাশে থাকে। সে অরিত্রকে সাহস দেয় এবং তার বাবার ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য নিজের লেখালেখির কাজ শুরু করে। অহনা বিভিন্ন পত্রিকাতে গল্প লেখা শুরু করে এবং তার উপার্জিত অর্থ অরিত্রের বাবার ঋণ পরিশোধে সাহায্য করে।
অরিত্র অহনার ভালোবাসায় নতুন করে বাঁচার প্রেরণা পায়। সে বুঝতে পারে, অহনা শুধু তার জীবনের প্রেম নয়, তার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি।
একদিন অরিত্র তার বাবার কাছে জানতে পারে, তাদের কোম্পানির একজন পুরোনো কর্মচারী তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ। সেই কর্মচারী গোপনে কোম্পানির অর্থ সরিয়ে নিয়েছে। অরিত্র প্রমাণ সংগ্রহ করে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে।
অবশেষে, অরিত্রের বাবা ব্যবসায়িক ক্ষতি থেকে মুক্তি পান। তাদের পরিবার আবার সুখের দিন ফিরে পায়। অরিত্র বুঝতে পারে, সততা আর ভালোবাসার জয় সবসময় হয়।
অরিত্র আর অহনা আবার গ্রামে ফিরে যায়। তারা দুজনে মিলে একটি ছোট আর্ট গ্যালারি খোলে, যেখানে অরিত্রের আঁকা ছবি আর অহনার লেখা বই বিক্রি হয়। তাদের গ্যালারিটি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
একদিন, গ্যালারির বাগানে অরিত্র আর অহনা বসে ছিল। আকাশ মেঘলা ছিল, আর টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। হঠাৎ একটি নীল প্রজাপতি তাদের সামনে এসে বসে। অরিত্র আর অহনা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে।
অরিত্র অহনার হাত ধরে বলে, "নীল প্রজাপতি আমাদের ভালোবাসার প্রতীক। এই প্রজাপতি আমাদের জীবনে শান্তি আর সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছে।"
অহনা অরিত্রের বুকে মাথা রাখে। "আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব, অরিত্র। সবসময়।"
তারা দুজনে নীল প্রজাপতির মতো রঙিন হয়ে ওঠে তাদের জীবন। তাদের ভালোবাসার গল্প গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
"এই গল্পটি লেখার সময় আমি অনেক আনন্দ পেয়েছি। আশা করি, তোমাদেরও ভালো লাগবে। তোমাদের ভালোবাসা আর সমর্থন আমার লেখার পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
- Get link
- X
- Other Apps
Popular Posts
কাঁচের ভিতর, ক্যামেরার ফাঁদ — ঢাকার গাড়ির MMS কেলেঙ্কারি
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment