গল্পের নাম: সময়ের চিঠি
লেখক : মাসুম
ব্লগ : EditorPosts
সন্ধ্যার আলো মিশে যাচ্ছে আকাশের মেঘে। বারান্দার কোণে বসে থাকা অরুণ এক কাপ চায়ে চুমুক দিচ্ছে, আর তার হাতের তালুতে ঘুরছে এক পুরনো চিঠি। বাইরে বৃষ্টির শব্দে ভেসে যাচ্ছে শহর। জানালার কাঁচে গড়িয়ে পড়ছে জলবিন্দু, একটানা ছন্দে যেন কোনো অজানা সুর বাজছে।
এই শহরে অনেক দিন পর এমন বৃষ্টি, আর ঠিক সেই মুহূর্তেই এসে পৌঁছেছে এক রহস্যময় চিঠি—যা যেন সময়কে ছুঁয়ে এসেছে। চিঠিটা আসলে “ফিরে” আসেনি, বরং কেউ সময় পেরিয়ে এটি পাঠিয়েছে। এর খামে লেখা: “প্রিয় অরুণ, ২০৫৫ সাল থেকে ভালোবাসা পাঠালাম।”
অরুণ প্রথমে ভেবেছিল এটা মজা। কিন্তু খামের ভেতরে থাকা চিঠির অক্ষরগুলো এতটাই বাস্তব আর স্পর্শকাতর ছিল যে, তার বুক কেঁপে উঠল। চিঠিতে লেখা:
“তুমি আমাকে চিনবে না, কিন্তু আমি তোমাকে চিনি। তোমার শৈশবের অনেক স্মৃতি আমি জানি—সেই বৃষ্টির রাতে তোমার হারিয়ে যাওয়া, মায়ের কান্না, বাবার লণ্ঠনের আলো। আমি সেই রাতেই তোমাকে দেখেছিলাম—এক ছায়ার ভেতরে তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে। আমি তখন কিছুই বুঝিনি। এখন বুঝি, বুঝি কেন সেই মুহূর্ত এত গভীর করে মনে গেঁথে আছে।”
অরুণ থমকে যায়। এত নিখুঁতভাবে কেউ তার স্মৃতি জানে কীভাবে? সে পড়া চালিয়ে যায়।
“আমি ভবিষ্যতের মানুষ, কিন্তু তোমার অতীত আমার বর্তমান। আমি জানি তুমি একজন লেখক হবে, যে প্রতিটা গল্পে নিজের ছায়া রেখে যাবে। তুমি প্রেমে পড়বে, ভাঙবে, আবার উঠবে। তোমার লেখা 'শেষ চিঠি'—আমার জীবনের এক কঠিন রাতে আশ্রয় ছিল। আমি অনেকবার পড়েছি। কেঁদেছি। বেঁচে থেকেছি।”
চিঠির শেষ লাইনে লেখা ছিল:
“আমি জানি না এই চিঠি তোমার হাতে পৌঁছাবে কি না, কিন্তু যদি পৌঁছায়, জানো—তোমার লেখা কাউকে বাঁচিয়ে তুলেছে। হয়তো আমি, হয়তো অন্য কেউ। তুমি একা নও, কেউ না কেউ তোমার শব্দে জীবনের মানে খুঁজে পায়। লিখে যাও।”
অরুণ স্তব্ধ। এমন অনুভব সে আগে কখনও পায়নি। নিজের লেখা কেউ এত গভীরভাবে অনুভব করেছে—এটা যেন কোনো অলৌকিক স্বীকৃতি।
সে জানালার ধারে এসে দাঁড়ায়। বৃষ্টির শব্দের মাঝে মনে হয়, সেই অজানা পাঠক তার পাশে দাঁড়িয়ে। চোখ বন্ধ করে চিঠির শব্দগুলো মনে করতে থাকে, যেন প্রতিটা অক্ষর তার হৃদয়ে খোদাই হয়ে গেছে।
অরুণ এবার নিজের ডেস্কে বসে। হাতের কলমটা তুলে নেয়। কাগজে লিখতে শুরু করে—
“প্রিয় অজানা পাঠক, তোমার ভালোবাসা পেয়েছি। হয়তো কখনো দেখা হবে না, কিন্তু জানো, তুমিই আমার গল্পের পাঠক, তুমিই আমার অনুপ্রেরণা। তুমি পাশে থাকো—শব্দের ভেতরে, বাক্যের মাঝে। এই লেখাগুলো তোমার জন্যই…”
গল্পের থিম: সময়, চিঠি, ভালোবাসা, একাকীত্ব এবং লেখার অনুপ্রেরণা।
"এই লেখাগুলো মূলত কল্পনাপ্রসূত এবং শুধুমাত্র পাঠকের অনুভূতি জাগানোর উদ্দেশ্যে।"
Comments
Post a Comment